বর্তমান সময়ে অনেকেই ফ্রিল্যান্সার হতে চান। কিন্তু সঠিক দিক নির্দেশনা ও ধৈর্যের অভাবে অনেকেই কিছুদিন পরে হাল ছেড়ে দেয় এবং হতাশায় পড়েন। তবে একটা কথা মনে রাখবেন কেউ হারবে কেউ জিতবে। এইটাই স্বাভাবিক. তবে আপনি যদি বুঝতে পারেন কেন বিজয়ীরা জিতেছে এবং কেন পরাজিতরা হেরেছে, এবং তারপর সঠিক পথে এগিয়ে যান, তাহলে অবশ্যই আপনার জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
আমরা অনেকেই সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য মাসের পর মাস বিভিন্ন কোর্স/জব করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, যখন তার যথেষ্ট বিডিং ছিল, তখন তিনি আর ধরে রাখতে পারেননি এবং হাল ছেড়ে দেন। একজন ভালো বা সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার কিছু তথ্য শেয়ার এই আর্টিকেল এর সেয়ার করা হবে।
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ঘরে বসে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের সাথে অনলাইনে কাজ চুক্তি করে এবং অনলাইনে কাজ সরবরাহ করে আয় উপার্জন করা কেই মুলত জন্য ফ্রিল্যান্সিং বলা হয়, এই খানে নিজের পছন্দ মত নিজের কাজ করার কারনেই এই পেশাকে ফ্রিল্যান্সিং বলা হয়ে থাকে।
উদাহরণ হিসেবে ধরে নিচ্ছি আপনি ভালো গ্রাফিক ডিজাইন জানেন। আপনি বাংলাদেশে আপনার লোগো তৈরি করলে প্রায় ১০০ টাকা পাবেন। কিন্তু লোগোটি যদি ইউরোপের কোনো দেশে তৈরি হয়, তাহলে তার দাম পড়বে ৩০০-৪০০ টাকা । এখন বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোগো তৈরি করলে ভাবুন আরো কত বেশি টাকা আয় করা যাবে?
কিন্তু কাজ একই এবং আপনার ক্রেতাদের সাথে আপনাকে সংযুক্ত করার জন্য মোট আয়ের ১০% এর কম নেবে।
ফ্রিল্যান্সার হতে চান?..যেভাবে শুরু করবেন…
প্রথম ধাপ: আপনাকে অবশ্যই কিছু উচ্চ-মানের কাজ শিখতে হবে। তাই মাইক্রোসফট ওয়ার্ড-এক্সেল এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে ভালো জ্ঞান সবার আগে প্রয়োজন। অবশ্যই, ইংরেজি আরও সমৃদ্ধ হতে হবে। তবে ভয় পাবেন না যদি আপনি ফ্রিল্যান্সিং করার সময় কোনো ইংরেজি শব্দ বা বাক্যকে বাংলায় অনুবাদ করতে না পারেন তাহলে আপনি গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করতে পারেন। তারপর আপনি SEO শেখা শুরু করতে পারেন।
ধাপ-২: SEO এর কাজ শেখার পর আপনি ব্যাক লিংক তৈরির কাজ করতে পারবেন। তবে প্রথমেই বড় কাজ শুরু করবেন না। আপনি সহজেই সম্পন্ন করতে পারেন এমন কাজগুলিতে বিড করুন। এই ক্ষেত্রে, আপনি ছোট, কম বেতনের চাকরিতে বিড করতে পারেন। বুঝতে পারছেন না কি বিড করবেন? “টেন্ডার” শব্দের অর্থ “অফার” বা “আবেদন”। অনেক ক্রেতা ওডেক্সে তাদের বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়। ধরুন ক্রেতার একটি স্কুল আছে। ক্রেতা তার স্কুলের জন্য একটি লোগো ডিজাইন করতে চায়। এখন তিনি তার লোগোর বিস্তারিত একটি নোটিশ জারি করবেন। এখন, আপনি যদি একটি ভাল লোগো ডিজাইন করতে পারেন, আপনি আবেদন করতে যাচ্ছেন অর্থাৎ কাজের জন্য বিড করতে যাচ্ছেন।
———————————————————————–
স্টেপ-৩ : এখন আপনি আস্তে আস্তে ব্যাকলিংকের কাজে বিড করে যান যদি কাজ পান তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এবং খুবই যত্নসহকারে কাজটি শেষ করুন। আর যদি কাজ না পান তাহলে মন ভাংঙ্গবেন না। চালিয়ে যান বিড করা আর সেই সাথে ছোট ছোট কাজ করে আপনি অল্পকিছু আয় করতে পারেন মাইক্রোওয়ার্কাস.কম থেকে। এখানে আপনাকে কাজের বিড করতে হবে না। তবে ইনকাম খুবই কম হবে। তাই বলে হাল ছেড়ে দিবেন না। কারণ এই ছোট ছোট কাজ গুলো করেই আপনি নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিকে বড় করতে থাকবেন যা আপনাকে পরবর্তীতে বড় বড় কাজ পেতে ও কাজ গুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে। লিংকে গিয়ে মাইক্রোওয়ার্কস এ একাউন্ট খুলুন এবং All Jobs ট্যাবে যান। পছন্দ অনুযায়ী কাজ বেছে নিন যা আপনার জন্য সহজ হবে তাই শুধু বেছে নিবেন। বেশী টাকার লোভে পড়ে যা পারবেন না তা নিয়ে এগুতে যাবেন না।
স্টেপ-৪: আমি বার বার বলছি ছোট ছোট কাজ করুন ছোট ছোট আয় করুন। কাজ শেষে আপনি যখন দেখবেন আপনার একাউন্টে ডলার জমছে তখন অনেক মজা পাবেন। আর ছোট ছোট কাজ বলতে মাইক্রোওয়ার্কাস এ আপনি বিভিন্ন ফেসবুক লাইক-কমেন্ট-শেয়ার, ইউটিউব সাবসক্রাইব, বিভিন্ন সাইটে সাইন আপ করার কাজ পাবেন। তবে মনে রাখবেন ওডেক্স এবং মাইক্রোওয়ার্কাস এ যে ইমেই আইডি দিয়ে রেজি: করবেন তা আর অন্য কোন সাইটে সাইন আপে ব্যবহার করবেন না। বিভিন্ন সাইটে সাইন আপ করতে হলে নতুন কয়েক টি ইমেইল আইডি তৈরি করে নিন।
স্টেপ-৫ : এই ভাবে ওডেক্সে বিড এবং মাইক্রোওয়ার্কাস এ নিয়মিত কাজ চালিয়ে যেতে থাকুন এবং আরোও বিভিন্ন কাজ যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ শিখতে থাকুন। আর নিজের ক্যারিয়ারে করুন সমৃদ্ধ।
স্টেপ-৬ : মোটামুটি ভাবে কাজ শিখা হলে স্থানীয় যেমন আপনার বন্ধু-স্বজনদের ওয়েবডিজাইন এর কাজের প্রয়োজন পড়লে তাদেরকে কাজ করে দিন এতে আপনার কিছু অর্থ উপার্জন হল এবং অভিজ্ঞতাও অর্জন হলো।
স্টেপ-৭ : এখন আপনি আস্তে আস্তে ওডেক্সে ওয়েব ডিজাইন এবং গ্রফিক্স ডিজাইনসহ আরোও যেসকল কাজ শিখেছেন ঐ গুলোতে বিড করতে থাকুন। মনে রাখবেন বিড করার সময় যে সকল ফিল্ড পূরণ করতে হয় তাতে যেন আপনার মেধা-আন্তরিকতা, কাজকরার ও যথা সময়ে ডেলিভারী দেওয়ার ক্ষমতা প্রকাশ পায়। প্রয়োজনে প্রথম কাজটির মূল্য একদম কমিয়ে দিয়ে বিড করুন। প্রথম কাজে না হয় আপনার পারিশ্রমিক একটু কমই পেলেন। কিন্তু কাজ যদি সঠিক ভাবে ডেলিভারী দিতে পারেন তাহেল কিন্তু আপনার জন্য এই হবে প্লাস পয়েন্ট।
স্টেপ-৮ : ধরেন আপনি কাজ পাচ্ছেন না। তাই বলে কিন্তু বিড করা ছেড়ে দিবেন না। বিড আপনাকে করে যেতেই হবে। সেই সাথে লোকাল মার্কেটেও আপনাকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এতে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকবে। আর একদিন না একদিন আপনি ইনশআল্লাহ কাজ অবশ্যই পাবেন।
স্টেপ-৯ : ধরেন আপনি কোন বড় কাজের বিড করলেন এবং কাজটি পেয়েও গেলেন। এখন আপনিতো আর একা কাজ করে কুল কিনারা পাচ্ছেন না। এখন কি করবেন? ভয়ে গুটিয়ে থাকবেন? না কখনই না আপনার সিনিয়র ভাইদের সাথে কথা বলুন। আপনাকে হেল্প করতে বলুন। আর আপনার বন্ধু দের মধ্যে যারা বিড করতে করতে অধের্য্য হয়ে গেছে কিন্তু কাজ পাচ্ছে না, তাদেরকে আপনার কাছে টানুন এবং সকলে একসাথে গ্রুপিং করে কাজটি শেষ করুন। এতে আপনি হয়ে যাবেন গ্রুপ লিডার এবং আপনার বন্ধুরাও কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারল। সেই সাথে আপনার জন্য প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে আপনার ওডেক্স প্রোফাইল সমৃদ্ধ হল। যা পরিবর্তীতে আরোও বড় কাজে পেতে আপনাকে সহায়তা করবে। আর যেহেতু আপনিই কাজ গুলো ওডেক্স থেকে বিড করে নামাচ্ছেন সেই ক্ষেত্রে আপনি আপনার সহকারীদের কাছ থেকে অল্প বেনিফিট কেটে রাখতে পারেন।