সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর অনেক সুবিধা রয়েছে। আপনি যদি সঠিক নিয়মে এটি করতে পারেন তাহলে দীর্ঘস্থায়ী এর সুবিধা পাবেন। কারন ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় সেক্টর হল সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা SEO। সঠিক পদ্ধতিতে আপনার বা আপনার কোম্পানির সাইটের জন্য যদি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কাজ করা হয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে প্রচুর বেনিফিট পাওয়া যাবে, ওয়েবসাইটকে ঠিক মত Monetize করতে পারলে প্রচুর রেভিনিউও জেনারেট করা সম্ভব। SEO-এর কিছু সুবিধা পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করছিঃ
১) খরচ কম এবং অর্গানিকঃ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্যের মার্কেটিং করতে যে টাকা খরছ হয় তার থেকে অনেক কম খরচে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় এসইও এর মাধ্যমে। বিজ্ঞাপনের তুলনায় খরছ অনেক কম। এবং এর মাধ্যমে খুব সহজে কম খরচে সবার কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। বিজ্ঞাপন এবং পেইড মার্কেটিং থেকে এসইও খরচ যেমন কম এর পাশাপাশি অর্গানিক উপায়ে কাস্টমার এর কাছে আপনার ওয়েবসাইট বা প্রোডাক্ট পৌঁছাতে পারবেন।
২) সাইটের ভিজিটর বা ট্রাফিক বৃদ্ধিঃ আপনার ওয়েবসাইট যত ভাল এবং সুন্দর হোক না কেন যদি ভিজিটর না আসে তাহলে সেটার কোন ভেলু থাকবে না। আমার ওয়েবসাইট কন্টেন্ট যত ভাল হোক না কেন যদি সেটা ভিজিটর না দেখে ওদের কাছে পৌঁছাতে না পারেন তাহলে সেটা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। কারন ওয়েবসাইট তৈরি করার পর আমাদের সবার একটা উদ্দেশ্য থাকে যেন অনেক বেশি ভিজিটর ওয়েবসাইট ভিজিট করে। যত বেশি ভিজিটর ওয়েবসাইটে আসবে ট্রাফিক তত বাড়বে সাথে আপনার সেল অনেক বেড়ে যাবে। এসইও এর স্ট্র্যাটেজি সার্চ ইঞ্জিনে আপনার ওয়েবসাইটের র্যাংকিং উন্নতি করবে এবং আপনার সাইটকে দ্রুততার সাথে ভিজিটরের সামনে আনবে।
৩) ‘’ROI (return on investment)’’ এ ভালো স্কোরঃ যদি আপনার একটি ভাল এসইও কোম্পানির সাহায্য নেন, তাহলে তারা আপনার এসইও বিজ্ঞাপনগুলি কতটা কার্যকর তা সঠিকভাবে ট্র্যাক করতে সক্ষম হবে। আপনি আপনার র্যাঙ্কিং, ট্রাফিক সংখ্যা এবং কাস্টমারের অনুপাত দেখতে পারবেন এবং আরও ভালো ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
৪) ব্র্যান্ডের গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বস্ততা বাড়বঃ সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ দিয়ে যখন আপনার ওয়েবসাইট বা পণ্য সবার প্রথমে দেখতে পাবে তখন অন্য সবার থেকে আপনার ব্র্যান্ড বা সাইট উপর বেশি বিশ্বাস রাখবে। সবার কাছে বিশ্বস্ততা অনেক গুন বেড়ে যাবে। আপনার সাইট বা পণ্য যখন সবার উপরে থাকবে তত বেশি গ্রাহক বা ভিজিটর আকৃষ্ট হবে। এতে করে আপনার ব্র্যান্ডের গ্রহণযোগ্যতা সবার কাছে অনেক বেড়ে যাবে। আর আপনি যদি একবার মানুষের মনে বিশ্বাস এর জায়গাটা তৈরি করে নিতে পারেন তাহলে আপনার উন্নতির ধারা তার সাথে Profit সবার থেকে বহু গুনে বেড়ে যাবে। কারন আপনার যদি কোন ব্র্যান্ড উপর আস্থা বা বিশ্বাস চলে আসে আপনি বার বার সেই ব্র্যান্ড জিনিস খুঁজবেন।
৫) বিজনেস প্রসারিত করতে সাহায্য করেঃ আপনি যত বেশি ট্রাফিক পাবেন, আপনার সার্ভিস এবং প্রোডাক্টকে সাধারনের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া আপনার পক্ষে তত সহজ হবে। এসইও টুলস আপনাকে আপনার কাস্টমারদেরদের কাছ থেকে আপনার পন্য বা সেবা সম্পর্কে মতামত পেতেও সাহায্য করে। কাস্টমারদের মতামত আপনাকে আপনার পণ্য বা সেবাকে কাস্টমাইজ করতে সাহায্য করবে, যাতে আপনি আপনার কাস্টমারদের চাহিদা আরও ভালভাবে পূরণ করতে পারেন। আপনি আপনার কাস্টমারদের চাহিদা যত ভালোভাবে পূরণ করবেন, ততই আপনার ব্যবসা প্রসারিত হবে। এছার সঠিক এসইও করার মাধ্যমে টার্গেট কাস্টমার এর কাছে আপনার সার্ভিস বা প্রোডাক্ট মার্কেটিং করতে পারবেন।
৬) প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার শক্ত ভিত তৈরি করবেঃ আমরা সবাই জানি বর্তমান সময় হল প্রতিযোগিতার সময়। আর এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সব সময় সবার উপরে থাকতে হবে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে আপনার আশেপাশের প্রতিদ্বন্দ্বীরাও পিছিয়ে থাকবে না। তারাও সর্বোচ্চ পরিমানে এসইও ব্যবহার করে র্যাংকিং এর শীর্ষে থাকার চেষ্টা করবে। আর আপনিও চাইবেন না যে আপনার ভিজিটর বা কাস্টমার অন্য কোথাও চলে যাক। সেজন্য আপনাকে ভাল সার্ভিস অবশ্যই দিতে হবে, তার পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা SEO আপনার সাইট বা সার্ভিসকে র্যাংকিং রেখে আপনাকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার শক্ত ভিত তৈরি করবে।
৭) ওয়েবসাইটকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করেঃ এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন আপনার ওয়েবসাইটকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে অনেক বেশি সহায়তা করে। আপনার ওয়েবসাইটের লিংক এবং স্ট্রাকচার সহজে ব্যবহার করা যাবে এমন পদ্ধতিতে সাজানো হয়েছে কিনা তা বিভিন্ন এসইও টুল দ্বারা নিশ্চিত করা যায়। এসইও কেবল আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে ইনডেক্স ও র্যাংক করতেই সাহায্য করে না বরং ভিজিটরকেও নির্ধারিত কিওয়ার্ডের মাধ্যমে আপনার সাইটটিকে খুঁজে পেতে সাহায্য করে। আপনার ওয়েবসাইট যখন সঠিক পথে থাকবে তখন আপনার ভিজিটর এর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।
৮) ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেনঃ ইন্টারনেটে থাকা মিলিয়নেরও বেশি ওয়েবসাইটের মধ্যে আপনি নিশ্চয় আলাদাভাবে দাঁড়াতে চান এবং চান যে লোকেরা আপনাকে সহজেই খুঁজে পাক? ভালোমানের এসইও অ্যাপ্লিকেশনসমূহ মূলত এই কাজটিই করে থাকে। বর্তমান যুগে ইন্টারনেটের উপযুক্ত ব্যবহার আপনার ব্যবসার সাফল্যের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার উপস্থিতি যত বেশি হবে তত বেশি ট্রাফিক পাবেন। সঠিক উপায়ে এসইও করার মধ্যে দিয়ে আপনি খুব সহজে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে আপনার ওয়েবসাইট পৌঁছে দিতে পারবেন।
৯) প্রচুর ক্লিক পেতে সাহায্য করবেঃ সার্চ ইঞ্জিনে মানুষ কোন কিছু সার্চ করে প্রথম পেজে যে লিঙ্ক গুলা থাকে সেই লিঙ্কে বেশি ক্লিক করে আর সেখানে যদি সে তার পছন্দের জিনিস পেয়ে যায় তাহলে আর দ্বিতীয় পেজে যায় না। একটি হিসেবে দেখা গিয়েছে সার্চ ইঞ্জিনের মোট ক্লিকের ৬০-৭০% ক্লিক র্যাংকের প্রথমে থাকা ওয়েবসাইট গুলাতে হয়ে থাকে। এসইও মূলত আপনার ওয়েবসাইট কে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথমে নিয়ে আসতে সাহায্য করবে। এতে করে আপনি প্রচুর ক্লিক পাবেন এবং ভিজিটর পাবেন এবং সেল ইনকাম সব কিছু দ্রুত বেড়ে যাবে।
১০) কাস্টমার তথ্য সংগ্রহ করতে সাহায্য করবেঃ যেকোন বিজনেসে কাস্টমারের ডিমান্ড বুঝতে পারা বিশাল ব্যাপার। আপনার আশেপাশে কাস্টমাররা কি খুঁজছে, কি কিনছে, এবং কি মূল্য দিতে ইচ্ছুক এই বিষয়টি যখন আপনি বুঝতে পারবেন তখন এই তথ্য আপনাকে আপনার পণ্য ও সেবাকে আরো উন্নত এবং সঠিক ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। আর এসইও আপনাকে তথ্য সংগ্রহ করতেও সাহায্য করবে। একবার আপনার ওয়েবসাইট টপ র্যাংকিং নিয়ে যেতে পারলে, অন্য কারও পক্ষে আপনার স্থান পরিবর্তন করা এবং আপনাকে রিপ্লেস করা খুব কঠিন হয়ে যাবে।
ক্যারিয়ার হিসাবে SEO এক্সপার্টদের ভবিষ্যৎ কেমন?
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কি? কি ভাবে করে হয় এবং এর সুবিধা এই সব কিছু আশা করি উপরের লেখাটা পড়ে বুঝতে পেরেছেন। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে ক্যারিয়ার হিসেবে এসইও কেমন হবে? আপনি যদি বর্তমান অনলাইনের দিকে একটু ভাল ভাবে লক্ষ্য করেন থাকলে দেখতে পারবেন অনলাইনের সব কিছু তে এখন এসইও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারন সবাই চাই তার ওয়েবসাইট বা পণ্য বা যে কোন সার্ভিস যায় হোক সেটা যেন সঠিক উপায়ে সবার কাছে পৌঁছে যায় এবং মানুষ যেন খুব সহজে ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনে তার সেই সার্ভিস বা পণ্য সহজে খুজে পায় এবং সে সম্পর্কে মানুষ জানতে পারে।
আপনি যদি একজন SEO এক্সপার্ট হতে পারেন তাহলে শুধু মাত্র এই এটি অভিজ্ঞতা দিয়ে অনলাইনে যে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেমন Fiverr, Upwork, 99Desings, এই সকল মার্কেটপ্লেসে কাজ করে প্রতি মাসে অনেক স্মার্ট ইনকাম করতে পারবেন। এছাড়া আমাদের দেশি অনেক ওয়েবসাইট ও কোম্পানি রয়েছে যারা বর্তমানে ডিজিটাল ভাবে তাদের সার্ভিস বা প্রতিষ্ঠানকে মার্কেটিং করে আর সে ক্ষেত্রে প্রয়জন সঠিক এসইও। আপনি চাইলে এই সকল প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে প্রতিমাসে হ্যান্ডসাম একটা ইনকাম করতে পারেন।
এছাড়াও আপনি যদি নিজে যদি কোন ওয়েবসাইট তৈরি করে বা অনলাইন স্টোর তৈরি করে আর্টিকেল লেখা বা প্রোডাক্ট সেল করে ইনকাম করতে চান সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর। অনেকেতো আবার টিম তৈরি করে মার্কেটিং এজেন্সির মাধ্যমে গ্লোবালি SEO-এর সার্ভিস দ্দিচ্ছে। আশা করি বুঝতেই পারছেন, আপনি যদি একজন SEO এক্সপার্ট হতে পারেন তাহলে আপনি চাইলে বিভিন্ন উপায়ে ইনকাম করতে পারেন। আসলে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন ছাড়া একটা ওয়েবসাইট কখনোই পূর্ণতা পায় না। কারন কোটি কোটি সাইটের মধ্যে আপনার সাইটের অবস্থান প্রথম সারিতে তৈরি করতে হলে এর বিকল্প নেই। তাই আপনি অনলাইনে ভাল কিছু করতে চাইলে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বা SEO সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে।